স্বপ্ন ছিল হবেন বড় ফুটবলার। তার খেলার ধরন না কি ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো। যেকারণে তাকে এলাকান সবাই ডাকতো এমবাপ্পে নামেই। কিন্তু বাংলার সেই এমবাপ্পে হয়ে উঠেন দেশের দ্রুততম কিশোর। ২০১৯ সালে সালে জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১১.৪১ (ইলেকট্রনিক্স টাইম) সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম কিশোরের খেতাব জিতে নেয় খুলনার সামিউল ইসলাম।




ফুটবল কিংবা অ্যাথলেট দুটোতেই সামিউলের মুল শক্তি তার দুটো পা। যা দিয়েই নিজেকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় ভেঙে গেছে সামিউলের একটি পা। তাই তার স্বপ্নও প্রায় এখন ভেঙে যাওয়ার পথে।
আর দশটা পরিবারের মতো স্বাভাবিক জীবন সামিউলের নেই। পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বড় স্বপ্ন থাকলেও এপাড়া-ওপাড়ায় গিয়ে খ্যাপ খেলে সামিউল ইসলাম। যা রোজগার হয় সবই তুলে দিতেন বাবার হাতে। ক’রোনার কারণে খেলা বন্ধ থাকায় বিপদে পড়তে হয় তাকে। এমন সময় তার পরিবারের এক মাসের খরচ দিয়েছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু এরপর আবারো জীবিকান তাগিদে খেলতে শুরু করতে হয় তাকে। খ্যাপ খেলতে গিয়ে এবার দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছেন তিনি।




তবে সামিউল এখনই ভেঙে পড়ছেন না। সবার সহায়তা পেলে পায়ের অপারেশন করে আবারো মাঠে ফিরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তিনি। স্পোর্টসজোন২৪ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিউল শুনিয়েছেন তার স্বপ্ন ভঙের দুর্ঘটনার গল্প।
দুর্ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সামিউল বলেন, ‘গত রবিবার (১৬ আগস্ট) আমাদের এলাকার বড় ভাইয়েরা একটা খেলা আয়োজন করেছিল। খেলাটা হয়েছিল পথের বাজারে। সেখানে আমিও খেলতে গেছিলাম। ম্যাচে হাফ টাইমের আগেই আমরা গোল খাই। আমরা যেহেতু ভালোভালো খেলোয়াড় খেলতে গেছিলাম। তাই হারলে এটা অনেক সম্মানের ছিল।’
‘এরপর দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথম ১০ মিনিটেই গোল পরিশোধ করার। এরপর খেলা চলছিল, এক মুহুর্তে আমি অন স্টু ওয়ান সুন্দর একটি বল পেয়েছিলাম। এরপর বলটা নিজে আয়ত্তে নিয়ে নিই। বৃষ্টি হয়েছিল যেকারণে বলটা ভিজে গেছিল। মাঠ ভেজা ছিল। এরপর আমি জোরে শট নিতে গেছি ফিফটি ফিফটি হয়ে গেছে মানে গোলকি আর আমি। এরপর গোলকিপার স্লাইড দিছে আমি নিজেকে তখন সেভ দিতে গিয়ে লাফ দিছি। গোলকির মাথার উপর দিয়ে গিয়ে পড়ে যাই। তখন পড়ার সময় আমার ডান পা টা দুমড়ে যায়। গিরে টা একদিকে চলে যায়। আর গিরের মধ্যেই এক জায়গায় ভেঙে গেছে। যেটা এক্সরে রিপোর্টে দেখা গিয়েছে।’




পায়ের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে সামিউল বলেন, ‘ডাক্তার দেখার পর বলেছেন মাস্ট অপারেশন করতে হবে। এখন যেহেতু পা ফুলা তাই ১৫ দিন পরে অপারেশন করতে হবে। মূলত আড়াইশো বেডে আছি(খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল), এখানে তো অনেক সিরিয়াল সেকারণেই ডাক্তার বলেছেন ১৫ দিন পর অপারেশনের কথা।’
তবে সহায়তা পেলে দ্রুতই প্রাইভেট কোন হাসপাতালে নিজের অপারেশন করে নিতে চান সামিউল। কেননা যত দ্রুত অপারেশন করা হবে ততই মঙ্গল হবে তার জন্য। সামিউল জানান, ‘আমার দ্রুত অপারেশন করালে ভালো হবে। এজন্য এখানকার এক বড় অফিসারের সাথে কথা হয়েছে। উনি ইসলামিয়া হাসপাতালে অপারেশন করানোর কথা বলেছেন। এখান দেখা যাক কতটুকু সহায়তা পাওয়া যায়।’
তবে পা ভাঙলেও ডাক্তার জানিয়েছেন যদি অপারেশন করা হয় তবে মাঠে ফিরতে সমস্যা হবেনা তার। যেকারণে দ্রুতই অপারেশন করাতে চান তিনি, ‘ডাক্তার জানিয়েছেন অপারেশনের পর মাঠে ফিরতে কোন সমস্যা নেই। পুনরায় মাঠে ফিরতে পারবো।’




এখন পর্যন্ত কারো সহায়তা পাননি সামিউল।দেশবাসীর কাছে সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সবার কাছে দোয়া ও সহায়তা চাই। সহায়তা পেলে আমার জন্য অনেক ভালো হবে। আমি সুস্থ হয়ে আবারো মাঠে ফিরতে চাই।’
খুলনার আড়াইশো বেডের এই হাসপতাল থেকে হয়ত আজই ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি যাবেন সামিউল। এর মধ্যে যদি সহায়তা পান তবে অপারেশন করাবেন কোন প্রাইভেট হাসপতালে। আর তানাহলে ১৫ দিন পর খুলনার আড়াইশো বেডের হাসপাতালেই অপারেশন করাবেন তিনি। তবে যেখানেই অপারেশন করান, তার খরচ বহন করা সামিউলের পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যদিও সামিউলের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার বন্ধুরা।