বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মাশরাফি বিন মর্তুজা এক অনন্য অধ্যায়ের নাম। পায়ে সামান্য চোট পেলে যেখানে অনেকে দাঁড়িয়ে নামাজটুকু পর্যন্ত আদায় করতে চান না, সেখানে মাশরাফি তেরোটি সার্জারির ক্ষত নিয়ে আজও ক্রিকেট মাঠে রীতিমতো দৌঁড়ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন। যে ঘটনা শুনে বিশ্বের নামকরা শল্যবিদরা পর্যন্ত অবাক না হয়ে পারেন না। তবে মাশরাফির মনমানসিকতা সবসময়ই একটু অন্যরকম। একবার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে, কোনোভাবেই তাঁকে সেখান থেকে ফেরানো যায় না। আর তাঁর এই হার না মানা মানসিকতার সুবাদেই আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট এরকম সুদিনের দেখা পেয়েছে। মাত্র সাত বছরের অধিনায়কত্বে তিনি দলকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যা গত দুই যুগেও কেউ করে দেখাতে পারেনি। দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে মাশরাফি তাই এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। তবে শুধু যে কাজের মাধ্যমেই তিনি সবার মন জয় করে নিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। কখনো সখনো একজন বলিষ্ঠ নেতার মতো নিজের কথার মাধ্যমেও সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন নড়াইলের এই ‘প্রিন্স অব হার্ট’। ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিকের তেমনি পাঁচ উক্তি নিয়েই থাকলো আজকের আয়োজন।
তাঁরাই হলেন এই জাতির সত্যিকারের বীর
২০১৫ সাল নাগাদ মাশরাফির হাত ধরে যখন টাইগাররা বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে একের পর এক সিরিজ জয় করে যাচ্ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমগুলো তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বেশকিছু দারুণ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। যেখানে তাঁকে প্রায় সময়ই বাংলাদেশের ‘বীর সন্তান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু মাশরাফি সেসময় সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন এদেশের সত্যিকারের বীরেরা হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তিনি বলে দিয়েছিলেন, যাঁরা নিস্বার্থভাবে দেশের জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে প্রস্তুত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে অন্য কারো তুলনা হয় না।
অবশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের কষ্টের উদাহরণ দিয়ে আরো একটি মনে রাখার মতো কথাও বলেছিলেন মাশরাফি। সেবার তিনি বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যদি পায়ে গুলি নিয়ে যুদ্ধ করতে পারেন, তাহলে আমি কেন সামান্য সার্জারি নিয়ে বোলিং করতে পারবো না?’
ক্রিকেটাররা কি কারো জীবন বাঁচাতে পারে?
মাশরাফির সেরা উক্তিগুলোর মাঝে এটি আরেকটি। একবার এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, ক্রিকেটারদের বদলে ডাক্তারদের নিয়ে কিছু কিংবদন্তি গাঁথা রচনা করা উচিত। কেননা, তা থেকে তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়ে আরো পাঁচজনের জীবন রক্ষা করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, ক্রিকেটাররা চাইলেও কখনো ডাক্তারদের মতো করে মরণাপন্ন মানুষের জীবন বাঁঁচাতে পারবেন না।
মাশরাফির চোখে এপ্রজন্মের সেরা তারকা যাঁরা
প্রতিনিয়ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শহরের বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ করছেন হাজার হাজার নির্মাণ শ্রমিকরা। অন্যদিকে গ্রামে থেকে পরম যত্নে পুরো দেশবাসীর জন্য ফসল উৎপাদন করছেন দেশের লাখো কৃষকেরা। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা উন্নত জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে পারছি। মাশরাফির চোখে তাই মুক্তিযোদ্ধা কিংবা ডাক্তারদের পর এসব খেটে-খাওয়া মানুষেরাই সত্যিকারের তারকা।
ভালোবাসার কাছে বিক্রি হতে পারি, টাকার কাছে নয়
রাজনীতিতে পা রাখার পর থেকে বরাবরই সমালোচকদের বিরুপ মন্তব্য সহ্য করতে হয়েছে মাশরাফিকে। কখনো সখনো পরিস্থিতি এতোটা বাজে আকার ধারণ করত যে, নিন্দুকেরা মাশরাফির ব্যক্তিগত চরিত্র এবং আদর্শ নিয়েও আজেবাজে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেননি । অবশ্য ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক নিজের হাঁটুর ইনজুরির মতো করে এসব কথাবার্তাও কখনো গায়ে মাখানোর প্রয়োজনবোধ করেননি। তবে সম্প্রতি তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, দায়িত্বে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত নিজের পকেটের টাকা খরচ করেই এলাকাবাসীর সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি আরো জানিয়েছেন যে, এই চেয়ারের প্রতি তাঁর কোনো লোভ নেই। কারণ মানুষের ভালোবাসার কাছে তিনি হারতে পারেন কিন্তু টাকার কাছে মাশরাফি কখনোই বিক্রি হতে রাজি নন।