আইপিএলের খেলা চলছে। স্ট্রাইকে ক্রিস গেইল আর নক স্ট্রাইক এন্ডে রয়েছেন বিরাট কোহলি। পুরো গ্যালারি তখন গেইলের বন্দনায় বুঁদ হয়ে রয়েছে। হঠাৎ করেই গেইলের মারা একটি শট বিরাট কোহলির হেলমেটের একদম কাছ দিয়ে বন্দুকের গুলির বেগে ছুটে গেল। কোহলিও আঘাত পাওয়ার ভয়ে খানিকটা দূরে সরে গেলেন। এদিকে বলের গতিতে আম্পায়ারের হ্যাটেও লাগল বাতাসের ছোঁয়া। কিছুটা ভয় মেশানো গলায় আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা তখন কোহলিকে ছোটখাটো ধমক দিয়ে বললেন, ‘গেইল যখন ব্যাটিং করবে, খবরদার তুমি নড়বে না। কারণ তুমি নড়লেই আমি শেষ।’ সত্যিকার অর্থেই গেইল যখন মাঠে নামেন তখন আম্পায়াররাও ভয়ে ভয়ে থাকেন। ইউনিভার্স বস যে নিজের দিনে কতোটা ভয়ঙ্কর, সেটি বোলাররাই ভালো বলতে পারবেন। একাই পুরো একটি দলকে জেতানোর দুর্দান্ত ক্ষমতা রাখেন ক্যারিবিয়ান এই দানব আকৃতির মানুষটি।



























































































কিন্তু প্রদীপ যেমন চারদিকে আলো প্রদান করে, তেমনি তার নিচের অংশটুকু সবসময়ই অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। ঠিক এমনভাবেই আমরা সফল ব্যক্তিদের সফলতার গল্প শুনে পুলকিত হলেও তাঁদের জীবনের কষ্টকর অধ্যায়গুলো প্রায় সময়ই অজানা থেকে যায়। আজকের প্রতিবেদনে আমি গেইলের সফলতার গল্প নয়, বরং তাঁর শৈশবের কষ্টকর দিনগুলো সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।
























































































































১৯৭৯ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর জ্যামাইকার কিংস্টনের এক বস্তিতে বসবাসকারী হতদরিদ্র পরিবারে ক্রিসট্রপার হেনরি গেইলের জন্ম। যাঁকে আমরা চিনি ক্রিস গেইল নামে। ৬ ভাইবোনের মধ্যে গেইল তাঁর বাবা-মার পঞ্চম সন্তান। বাবা ডুডলি গেইল পেশায় একজন পুলিশ ছিলেন। কিন্তু তিনি খুব কম পরিমাণ বেতন পেতেন। অসচ্ছলতা তাই সহজে তাঁদের পরিবারের পিছু ছাড়েনি। একারণে মা হেনরি গেইলকেও প্রতিবেশীদের দরজায়-দরজায় এবং পার্কে ঘুরে ঘুরে বাদাম এবং টুকিটাকি হাল্কা খাবার বিক্রি করতে হতো। এরকম দৈন্যদশার মধ্যে গেইল যে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন, সেটা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। সবার ধারণা ছিল, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হলে সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরবেন অথবা মদের ব্যবসা করবেন কিংবা শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাবেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্যের লিখনটা অন্যরকমই ছিল।
























































































































গেইল এখন যেমন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান, ছোটবেলাতেও তেমনি দুরন্ত এক শিশু ছিলেন। দারিদ্রতার জন্য তিনবেলা ঠিকমতো খাবার না পেলেও নিয়ম করে ঠিকই মার খেতেন তিনি। সবচেয়ে বেশি উত্তম-মধ্যম খেতে হতো মায়ের হাতে। কারণটাও বেশ সঙ্গত ছিল। স্কুল পালানো, সারাদিন এখানে-ওখানে টইটই করে বেড়ানো, সমবয়সীদের সঙ্গে মারপিট করা – এসব ব্যাপারে ওস্তাদ ছিলেন গেইল। তাছাড়া খেতে বসলেও অনেক সময় খাবার নিয়ে জেদ করতেন তিনি। তাই তাঁর মা-ও তাঁকে বেশ কড়া শাসন করতেন।
























































































































এসবের মধ্যে তাহলে কিভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন গেইল? এজন্য গেইল সবসময়ই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন লোকাস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতি। এই ক্লাবটিই গেইলের প্রতিভা দেখে তাঁকে ওপরের দিকে উঠিয়ে তুলেছিল। ক্লাবটিতে খেলার সময় থেকেই বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে শুরু করেন তিনি। একটা সময় তাঁর ব্যাটিং জ্যামাইকান নির্বাচকদেরও ভালো লেগে যায়। তাঁরা তখন উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে খবর দেন যে জ্যামাইকা থেকে তাঁরা নতুন বিধ্বংসী ক্রিকেটার পাঠাচ্ছেন৷ ক্রিকেট বোর্ড যাবতীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাঁকে তখন অনুর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য মনোনীত করে। সেখানেও চমক দেখানো গেইল পরে ১৯৯৯ সালে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলে।
























































































































এরপর থেকে মেরুন জার্সি গায়ে একের পর এক রেকর্ড গড়তে থাকেন তিনি। ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর থেকে গত ১৪ বছরে সবধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে করেছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ ২০টি সেঞ্চুরি। তাছাড়া ফর্ম্যাটটিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান, সর্বোচ্চ বাউন্ডারি, দ্রততম সেঞ্চুরি – ইত্যাদি সব রেকর্ডই এখন তাঁরই দখলে। ভক্তরা তাই প্রায়শ ডাকেন ‘দ্য কিং অব টি-টোয়েন্টি’ নামে।
























































































































ছোটবেলায় তিনবেলা ঠিকমতো পেট ভরে খেতে না পারা ছেলেটিই আজ ৪০ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। কিন্তু শৈশবের সেসব কষ্টকর দিনের কথা গেইল আজো ভুলতে পারেননি। তাই তো ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিজস্ব অর্থায়নে তাঁরই মতো হতদরিদ্র কিশোর-যুবকদের জন্য গড়েছেন ‘দ্য ক্রিস গেইল একাডেমি’।
সেখানে তারা আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি কিছু কারিকারী প্রশিক্ষণও পেয়ে থাকেন। গেইলের এই মহানুভবতা করোনার মতো কঠিন পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের সাহায্য করতে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।























































































































